বার্বি ডল

রীমাদেবী সবে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছেন আর তখনই ডোরবেলটা বেজে উঠল বলে উনি একটু অবাকই হলেন, এই ভর দুপুরে আবার কে এলো? কষ্ট করে উঠে দোতলার বারান্দায় গিয়ে নিচে তাকালেন আর মনটা খুশিতে ভরে উঠল। হাসি হাসি মুখ করে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে সীমা, ওনার ছোট মেয়ে।মেয়েকে দাঁড়াতে বলে রীমাদেবী তার নাতিকে বললেন, যা তো রে লাট্টু, নিচের দরজাটা খুলে দিয়ে আয়, তোর রাঙা পিসি এসেছে। রাঙা পিসি এসেছে, রাঙা পিসি এসেছে বলতে বলতে নিচে গিয়ে দরজাটা খুলে দিল লাট্টু। রাঙা পিসিকে একা দেখে জানতে চাইল, মিষ্টুকে আননি?91sFA8yH3rL._SL1500_

– আমি তো অফিসের কাজে এসেছি, তোর বোনকে তাই আজ সঙ্গে আনি নি।

উপরে সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন রীমাদেবী, সীমার কথাটা শুনতে পেয়ে বললেন, ও মা, সে আবার কী কথা! সকাল সকাল এখানে এসে ওকে রেখে গেলেই তো পারতিস, লাট্টুটা মিষ্টুকে খুব মিস করে।

– ঠিক আছে মা, পরের বার না হয় তাই করব।

সীমা আজ অনেকদিন বাদে বাপের বাড়িতে এল। সীমার কথা প্রায় রোজই মনে পড়ে যায় রীমাদেবীর, বিশেষ করে শোকেসে রাখা বার্বি-ডলটায় চোখ পড়লে। সীমা যখন পাঁচ বছরে পড়ল, ওর ছোটমাসি তখন ওইটা ওকে জন্মদিনের উপহার হিসাবে দিয়েছিল। পুতুলটা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সীমা মা কে বলেছিল, মা, পুতুলটা প্যাকেট থেকে বের করে দেখি? মা বলেছিলেন, এখনই প্যাকেটটা খোলার কী দরকার? সাজিয়ে রাখ, সবাই দেখবে। কাল না হয় খুলিস।

সামান্য ওই কথাটায় মেয়ের যে অত অভিমান বা রাগ হতে পারে তা ছিল রীমাদেবীর কল্পনার বাইরে। সীমা কিন্তু কাউকে বুঝতে দেয় নি ওর অভিমান এর কথা। মা শুধু লক্ষ্য করেছিলেন, সীমা হঠাত্‍ কেমন যেন গম্ভীর হয়ে গিয়েছিল।

পরের দিন সকালে সীমা সব উপহারই খুলে খুলে দেখেছে, কিন্তু ওই বার্বি-ডলটায় একবারও হাত দেয় নি। বিকালে একবার রীমাদেবী বলেছিলেন, কি রে মাসির দেওয়া পুতুলটা খুলে দেখলি না? নির্বিকার মুখে সীমা বলেছিল, সাজানোই থাক না, মা, সবাই দেখবে। রীমাদেবী ভেবেছিলেন, এক সময় মেয়ের রাগ আর অভিমান ঠিকই কমবে। দেখতে দেখতে মেয়ে বড় হলো, তার বিয়েও হয়ে গেল। তবু তার অভিমান গেল না।

রীমাদেবী মেয়ের কাছে জানতে চাইলেন, তা তোর অফিসের কাজ হল?

– হ্যাঁ, মোটামুটি হয়েছে

– আজ না হয় থেকে যা, কাল সকালে যাস

– না মা, আজই যেতে হবে, কাল সকালে ওর বাবাকে আবার বোলপুর যেতে হবে।

চা জলখাবার খেতে খেতে সীমা বলল, মা, আগামী রোববার মিষ্টুর জন্মদিন করব, দাদাকে নিয়ে তোমরা সবাই যেয়ো কিন্তু। রওনা দেবার মুখে কী মনে করে সীমা শোকেসের সামনে মুহূর্তের জন্য দাঁড়ালো, শোকেসের ডালাটা খুলে, বার্বি-ডলটা হাতে নিয়ে বলল, মা, আমি এটা নিয়ে যাচ্ছি।

– হ্যাঁ, মা নিয়ে যা, এটা তো তোরই।

সীমা পুতুলটা হাতে নিয়ে মাকে প্রণাম করে বলল, মা, আজ তা হলে আসি। মা মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করে বললেন, সুখে থাকিস মা।

রীমাদেবীর চোখদুটো যে জলে ভরে গেল তা সীমা টেরও পেল না।

J. N. Ray

J. N. Ray

I am an electrical engineer by profession and have some experience in software development and allied fields. I have an interest in mathematics, solving puzzles & music. I read whatever I come across ranging from billboards & hoardings, leaflets handed over at metro station, pop ups on the internet browser, little magazines, short stories, poems, novels to recent scientific articles on physics, mathematics and inventions. I have a passion for writing poetry, short and micro stories.

More Posts

Related posts

Leave a Comment